odhikarpatra@gmail.com ঢাকা | Monday, 24th November 2025, ২৪th November ২০২৫
Gaza Sand Art: বালুকাবেলায় ফিলিস্তিনি ভাস্করদের অবলম্বন সৃজনশীলতা, মানুষের মুখে ফিরছে স্বস্তি

FREE GAZA ক্ষণস্থায়ী বালুর ভাস্কর্য—কিন্তু স্থায়ী মানবিকতা

odhikarpatra | প্রকাশিত: ২৪ November ২০২৫ ০৪:৪৯

odhikarpatra
প্রকাশিত: ২৪ November ২০২৫ ০৪:৪৯

আন্তর্জাতিক প্রতিনিধি, অধিকার পত্র ডটকম

গাজার চারপাশ আজ কেবল ধ্বংসস্তূপ। দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে ইসরায়েলি আগ্রাসনে বিধ্বস্ত এই উপত্যকায় মানুষের হাসি, কোলাহল, সমুদ্রতটের স্বাভাবিক দৃশ্য যেন অনেক আগেই মুছে গেছে। তবুও গাজার উপকূলের নরম বালু এখনো জীবনের স্পন্দন বহন করে। এখানেই প্রতিদিন ভোরে জমে উঠছে ভিন্ন এক মানবিক গল্প—বালুর ভাস্কর্য।


ধ্বংসস্তূপের শহরে নতুন ভাষা—বালুর ওপর আঁকা স্বপ্ন

ইসরায়েলি বোমাবর্ষণে শহরের শিল্পকেন্দ্র, প্রদর্শনী হল, গ্যালারি—সব এখন মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। ফলে শিল্পীরা হারিয়েছেন তাদের কাজের সরঞ্জাম, হারিয়েছেন জায়গা। কিন্তু মনোবল হারাননি।

সেই কারণেই ইয়াজিদ আবু জারাদ, মাজদ আয়াদা এবং আরও কয়েকজন ফিলিস্তিনি শিল্পী এখন প্রতিদিন বালুকাবেলায় ভোর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত কাজ করেন।
তাদের হাতের ছোঁয়ায় সৃষ্টি হয় বিশাল বালুর ভাস্কর্য, ক্যালিগ্রাফি, মানুষের প্রতিচ্ছবি এবং যুদ্ধবিরোধী বার্তা।

ইয়াজিদ বলেন—
“যুদ্ধ আমাদের ঘর ভেঙে দিয়েছে, কিন্তু শিল্প আমাদের ভাঙতে পারেনি। বালুর ওপর আঁকা প্রতিটি ছবি মানুষকে মনে করিয়ে দেয়—আমরা এখনো বেঁচে আছি।”


 শিশুদের মুখে আবারও ফুটে ওঠে ক্ষণিকের হাসি

যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে গাজার শিশুরা ড্রোনের শব্দ, বিস্ফোরণের আওয়াজ আর মৃত্যুর দৃশ্য ছাড়া আর কিছুই দেখেনি।
কিন্তু বালুর ভাস্কর্য দেখতে ভিড় করা শিশুদের মুখে প্রথমবার ফুটে ওঠে স্বস্তির হাসি।

অনেক শিশু খালি পায়ে ভাঙা ইটের পাশ কাটিয়ে ভাস্করদের কাছে আসে। তারা কৌতূহল নিয়ে দেখছে—কীভাবে ভাঙা টালি, কাঠের ডাল, বা ছোট তুলি দিয়ে শিল্পীরা বালুর ওপর ফুটিয়ে তোলেন ভালোবাসার বার্তা।

মাজদ আয়াদা বলেন—
“শিশুদের চোখে বিস্ময় দেখি। আর সেই বিস্ময়ই আমাদের শক্তি।”


 কোনো সরঞ্জাম নেই—তবুও ঘুরে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি

গাজায় এখন কোনো পেশাদার সরঞ্জাম নেই।
বালু খুঁড়তে তারা ব্যবহার করেন—

  • ভাঙা টালি
  • কাঠের ডাল
  • ছোট ব্রাশ
  • টেপ মেজার
  • পরিত্যক্ত প্লাস্টিক

এই সামান্য জিনিস দিয়েই তারা গড়ে তোলেন চোখ ধাঁধানো বিশাল নকশা, মানবমুখ, শহীদ স্মারক, এমনকি আরবি ক্যালিগ্রাফির নিখুঁত শিল্পকর্ম।

কিন্তু সবটুকু পরিশ্রমের পর সন্ধ্যার জোয়ার এসে প্রতিটি শিল্পকর্ম মুছে দেয়। তবুও কোনো অভিযোগ নেই।

ইয়াজিদ বলেন—
“সমুদ্র আমাদের শিল্প মুছে দেয়, কিন্তু আগ্রহ মুছে দিতে পারে না। প্রতিদিন নতুন করে আঁকা শুরু করি।”


 উপকূল হয়ে ওঠে মানুষের মনোরোগ-বিশ্রামের স্থান

কোস্টলাইনের পাশে হাজারো মানুষ বাস করে অস্থায়ী তাঁবু ও প্লাস্টিকের নিচে। বৃষ্টি, ঠান্ডা এবং খাদ্য সংকট তাদের প্রতিদিনের সঙ্গী।
তবুও তারা সমুদ্র তীরে এসে কিছুক্ষণ বালুর শিল্প দেখতে দাঁড়ান। যেন এটাই তাদের একমাত্র মানসিক বিশ্রাম।

এক নারী বলেন—
“আমরা সব হারিয়েছি। কিন্তু এই শিল্পগুলো দেখে মনে হয়, কেউ আমাদের জন্য এখনো সৌন্দর্য তৈরি করছে।”


 আর্টের মাধ্যমে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ

শিল্পীরা শুধু সৌন্দর্যই ফুটিয়ে তোলেন না—তারা যুদ্ধের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ, বার্তা এবং স্মরণও তুলে ধরেন বালুর ওপর।

  • “Free Gaza”
  • “Stop the War”
  • নিহত শিশুদের নাম
  • ধ্বংসপ্রাপ্ত স্থাপনার প্রতিলিপি

এসব আঁকা হয় যেন বিশ্বের মানুষ গাজার বাস্তবতা ভুলে না যায়।


Free Gaza ক্ষণস্থায়ী বালুর ভাস্কর্য—কিন্তু স্থায়ী মানবিকতা

যুদ্ধের মাঝে এই ভাস্কর্য হয়তো কয়েক ঘণ্টার বেশি টিকে থাকে না।
তবুও এর বার্তা দীর্ঘস্থায়ী—আশা, প্রতিরোধ, এবং মানবতা কখনো নিভে যায় না।

ইয়াজিদের কণ্ঠে প্রতিধ্বনিত হয় এই দৃঢ়তা—
“দুই বছর ধরে যুদ্ধ চলছে, তবুও আমরা হাল ছাড়িনি। শিল্পই আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছে।”



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: